যৌন স্বাধীনতা কতটা উপভোগ করার সুযোগ পান ভারতীয় নারী? প্রতিদিন পুরুষতন্ত্রের যুপকাষ্ঠে কতবার বলি দিতে হয় নিজের স্বকীয়তা, ব্যক্তিগত সুখের মুহূর্ত? ফেসবুকে সম্প্রতি জয়পুরের এক গৃহবধূর বিস্ফোরক বয়ান অনেকের নজর কেড়েছে। তিরিশ ছুঁই-ছুঁই যুবতী জানিয়েছেন, মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রায় কুড়ি বছরের বড় পাত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে স্বামীর যৌন দুর্বলতার খেসারত দিতে হতে হয় তাঁকে। নিজের অক্ষমতা ঢাকতে স্ত্রীর উপর বিভিন্ন যৌন অত্যাচার চালাতে শুরু করেন সেই ব্যক্তি। খাটের বাজুতে হাত বেঁধে, প্লাস্টিকের ব্যাগে মুখ ঢেকে, বেল্ট দিয়ে নিয়মিত নির্বিচারে ক্ষত-বিক্ষত করে চলতে থাকে নির্মম রোজনামচা। নিজের যৌনসুখ চরিতার্থ হয়ে যাওয়ার পর স্ত্রী-কে ঘরে ফেলে রেখে অন্য ঘরে শুতে যান সেই ভদ্রলোক। ভয়ে, লজ্জায়, অপমানের জ্বালা মুখ বুঁজে সহ্য করে চোখের জলে ভিজতে ভিজতে নিজের ভাগ্যকে অভিসম্পাত করেন অসহায় গৃহবধূ। লোকলজ্জার আশঙ্কায় মুখ ফুটে কাউকে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে না পেরে ধীরে ধীরে মানসিক রোগী হওয়ার পথে এগিয়ে চলেন তিনি।
এ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পরিসংখ্যান বলছে, দিনের পর দিন ভারতীয় দাম্পত্য জীবনে ঘটে চলেছে এই পরম্পরা। অধিকাংশ ভারতীয় পুরুষ তাঁর স্ত্রীর যৌন ইচ্ছা সম্পর্কে উদাসীন। নিজের পরিতৃপ্তি আদায় করাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। আসলে সমস্যার শিকড় রয়ে গিয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দ্বিচারিতায়। পরম্পরা মেনে যুগে যুগে স্ত্রীকে ব্যক্তিগত ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভাবতে শিখেছে ভারতীয় পুরুষ। স্ত্রীর সাজ-পোশাক, চলন-বলনে শাসনের আঁটোসাঁটো লাগাম পরাতে অভ্যস্ত সেই সমাজ নারী স্বাধীনতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। বিছানায় স্বামীর যৌন ইচ্ছা পূর্ণ করা তাই আদর্শ পত্নীর কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, এর উল্টোটা কখনওই বিবেচ্য হয় না।
লক্ষণীয়, ভারতীয় আদর্শ স্ত্রী-র যৌন ইচ্ছার বিষয়টি চিরদিন সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কখনও চিন্তা করা যায়, আয়নার সামনে নিজেকে মেলে ধরে শরীরের প্রতিটি খাঁজ খুঁটিয়ে দেখছেন কোনো নগ্ন ভারতীয় গৃহবধূ? ভাবা যায়, মেদবহুল রোমশ মধ্যবয়সী স্বামীর নির্মম যৌন অত্যাচারের নিচে পেশাই হতে হতে প্রাক্তন কোনো প্রেমিকের আদরের স্মৃতি তাঁকে তাড়িত করছে কি না? মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা তাঁর নিভৃত যৌন অভিসারের স্বপ্নের হদিশ কেউ জানতে চায় কি? প্রতি রাতে স্বামীর যৌন লিপ্সা মেটাতে নিছক বোবা সেক্সটয় ছাড়া অন্যকোনো ভূমিকার কথা কি তিনি নিজেও কোনোদিন আশা করতে পারেন? না। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অভিন্ন।
সম্প্রতি এক জনপ্রিয় ফ্যাশন পত্রিকার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৮ থেকে ৪০ বছরের প্রায় ২৩০০ মহিলা জানিয়েছেন, অধিকাংশই সহবাসের সময় অর্গ্যাজমের অভিনয়ে অভ্যস্ত। এঁদের মধ্যে ৭২ শতাংশ নারীর অভিযোগ, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর যৌন পরিতৃপ্তি হলেও স্ত্রী-র যৌন ইচ্ছা সম্পর্কে তিনি যত্নশীল নন। প্রতি রাতের রুটিন মাফিক যৌনতার পর্ব দ্রুত শেষ করতে নকল যৌন পরিতৃপ্তির নাটক করে চলেন অধিকাংশ গৃহবধূ। বলা বাহুল্য, তাতে বিন্দুমাত্র খুঁত খুঁজে পান না পতিদেবতা, কারণ নিজেকে নিয়েই তিনি মশগুল।
কিন্তু দিন বদলাচ্ছে। মনোবিদদের দাবি, ২০১২ সাল থেকে নিজের যৌন অতৃপ্তি সম্পর্কে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন ভারতীয় নারী। এই কারণের ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা বাড়ছে। চিকিৎসক রাজন ভোঁসলে জানিয়েছেন, যৌন অতৃপ্তির কারণে ইদানীং অধিকাংশ মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করছেন। তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত যৌনজীবনের সমস্যা প্রকাশ করতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করছেন না। গবেষকদের মতে, বর্তমানে একই কারণে বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ডেটিং ওয়েবসাইটের রমরমা। ব্যক্তিগত যৌন জীবনের অতৃপ্তি মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থায় আগ্রহী হচ্ছেন আটপৌরে গৃহস্থ নারী। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতের ১০টি শহরের ৮১ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ এবং ৬৮ শতাংশ বিবাহিত মহিলা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে যুক্ত। তাঁদের মতে, পরকীয়ার ফলে ব্যক্তিগত বিবাহিত সম্পর্ক আরও স্বাদু হয়ে ওঠে।
Post a Comment