0
এই যে ফুটফুটে দেবশিশুটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মিটিমিটি হাসছে, গতকাল একুশের প্রথম প্রহরকে জাস্ট কয়েক ঘণ্টা সামনে রেখেই তার জন্ম।
শিশুটি জন্ম নিয়েছে রাস্তায় ধারে এক বালির মাঠে, তাও সালমা নামে এক পাগলির গর্ভে। রাতের আঁধারে সন্তান সম্ভবা এক পাগলি মায়ের প্রসব বেদনার গগনবিদারী চিৎকার ভারি করে তুলছিল শিবচরের সে জনপদ।
এমন রাত্তিরে একটি নির্জন জায়গা থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে শব্দকে গন্তব্য করে ছুটে গিয়েছিল কিছু মহৎ তরুণ। গিয়ে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। এ প্রসববেদনায় চিৎকাররত পাগলি মাকে দেখে। 
তৎক্ষণে বাচ্চাটি প্রায় ভুমিতে এসে পড়েছে ...।
হুট করে এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে প্রথমে সবাই কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়লেও মুহূর্তেই তারা সামলে নিল। এদিক ওদিক ফোন দিয়ে জেনে নিল এ সময়টায় কি করতে হবে, আর তারপর চলল পরবর্তী কাজে হাত দেয়া ...
শিশুটির নাড়ি লেগে আছে পাগলির নাড়িতে, সারা গাঁ রক্ত আর বালিতে একাকার। 
পাগলি মায়ের চোখ তখন সন্তানের দিকে, তার চোখে হাসিকান্না মিশ্রিত আনন্দাশ্রু।
বন্ধুদের দু একজন ছুট লাগাল অদূর লোকালয়ে, ডেকে আনল কয়েকজন মহিলাকে, এ যে মহিলাদের কাজ। কিন্তু পাগলি বলে কথা, মহিলাদের অনেকে এসে জড়ো হলেও কেউ শিশুটির নাড়ি কাটতে রাজি হচ্ছিলেন না। একজন বন্ধু ডাক্তার ডাকলেন, রাতের আঁধারে এ নির্জনে এক পাগলির সেবায় আসতে প্রথমে তিনি আপত্তি জানান, এরপর চলে আসেন ...। ফলাফল বাচ্চা আর পাগলি মা হাসপাতালে ...
ছবিতে এই মহাজজ্ঞের নায়ক অমি এবং তার টিমকে দেখতে পাচ্ছেন। হ্যা, এই অমিদের শরীরের গড়নটাও রেপিস্টদের মতই..... বাট কাজটা?
আমি আসলে বুঝতে পারছি না, অমিদের বীরত্বের কথা ভেবে গর্ববোধ করব, নাকি পাগলিকে মা বানিয়ে দেয়া পিশাচটার কথা ভেবে লজ্জিত হব। আমি আসলেই বুঝতে পারছি না ....
আমি জানতে চাইব না এই পাগলি কিভাবে মা হল, আমি জানতে চাইব না এই শিশুর পিতৃপরিচয় কি? আমি জানতে চাইব না কোন পিশাচের নির্মম নির্যাতনের শিকার এই পাগলি মেয়েটি?
শুধু জানাতে চাইব, এ দেশে পাগলিকে মা বানিয়ে দেবার পেছনে যে অমানুষটি আছে, সে অমানুষের আদল নিয়েই এ দেশের আনাচ কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাগলির সন্তানকে সুন্দরভাবে পৃথিবীর আলোয় এনে দেওয়া অমিরা। 
জাস্ট একটু সন্মান দিন ওদের? একটু ভালোবাসুন? তাতে হয়ত প্রতিটি পরিবার ই হেসে উঠবে এমন এক একটা অমির হাসিতে। যে হাসিতে একদিন হাসবে গোটা বাংলাদেশ।
গতকাল নিজের শরীরের দিকে তাকাতে পারিনি সেই ঘৃণ্য রেপিস্টদের কথা মনে করে.... আজ অমির কথা ভেবে ভালো লাগছে কিছুটা।
হ্যাটস অফ অমি, সাগর, ইব্রাহিম, আজিজ ভাই এবং পুরো টিম। আপনাদের নিয়েই তৈরি হোক আগামীর বাংলাদেশ।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আপাতত ভালো থাকুক ভাষা কন্যা আর তার অসহায় পাগলি মা ....


Post a Comment

 
Top
This is my webpage